গাজা শহরের আল আহলি আরব হাসপাতাল প্রাঙ্গনে গণমাধ্যমকর্মীদের একটি দলকে লক্ষ্য করে ইসরাইলি হামলায় অন্তত চার ফিলিস্তিনি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সাংবাদিকরা মিডল ইস্ট আইকে এ খবর জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র অনুসারে, বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকালে কোনো পূর্বসতর্কতা ছাড়াই এ হামলা চালানো হয়।
ইসরাইলি এ হামলায় ফিলিস্তিন টুডে টিভির সংবাদদাতা সুলেমান হাজ্জাজ এবং আলোকচিত্রী ইসমাইল বাদাহ, শামস নিউজ এজেন্সির আলোকচিত্রী সামির আল-রিফাই এবং আল-আরাবিয়া টিভির আলোকচিত্রী আহমেদ কালজাহ নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিন টুডে টিভির সাংবাদিক ইমাদ দালোলও ইসরাইলি হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে দ্রুত নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
অনলাইন ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, আল আহলি হাসপাতালের আঙ্গিনায় মৃতদেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। সেখানে ফিলিস্তিনিরা একে অপরকে সাহায্য করার চেষ্টা করছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা মিডল ইস্ট আইকে জানান, সাংবাদিকরা যখন ঘটনাস্থলে খবর কভার করছিলেন তখন ইসরাইলি যুদ্ধবিমান হাসপাতালের আঙ্গিনা লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
হামাস ইসরাইলের ‘নতুন যুদ্ধাপরাধের’ নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়, ‘এটি একটি নিয়মতান্ত্রিক ইহুদিবাদী নীতির অংশ যা ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করে দিতে, গাজায় দখলদার বাহিনীর অপরাধ উন্মোচনে বাধা সৃষ্টি করতে এবং আমাদের ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে শত্রুর ভয়াবহ অপরাধের ন্যায্য বর্ণনা মুছে ফেলার জন্য লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, এটি গুরুতর যুদ্ধাপরাধ। কারণ জেনেভা কনভেনশন এবং সমস্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশনের অধীনে সাংবাদিকদের হত্যা করার সুযোগ নেই। তদুপরি, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সুরক্ষিত একটি বেসামরিক হাসপাতালে বোমা হামলা চালানো হয়েছে।
‘এটি বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর অপরাধী সরকারের ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যার অপরাধের পরিধি প্রসারিত করার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং এর আইনি ও মানবিক ব্যবস্থার প্রতি তার স্পষ্ট অবজ্ঞার প্রতিফলন’- বলা হয় বিবৃতিতে।
সাংবাদিকদের বধ্যভূমি
বৃহস্পতিবারের এ সাংবাদিকদের হত্যা ফিলিস্তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের উপর ইসরাইলের ভয়াবহ হামলার সর্বশেষতম ঘটনা।
পর্যবেক্ষক গোষ্ঠীগুলো গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনকে সাংবাদিকদের জন্য ‘ভয়াবহ সংঘাত” হিসাবে বর্ণনা করেছে। কারণ গত ২০ মাসে রেকর্ড সংখ্যক অন্তত ২২৫ জন গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন।
গত মাসে ওয়াটসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজার বিরুদ্ধে ইসরাইলি আগ্রাসনে যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধ, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, কোরিয়ান যুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ (কম্বোডিয়া ও লাওসের সংঘাতসহ), ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে যুগোস্লাভিয়ার যুদ্ধ এবং ৯/১১-পরবর্তী আফগানিস্তানের যুদ্ধের চেয়েও বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছে।
২০২৩ সালে গড়ে প্রতি চার দিনে একজন সাংবাদিক বা গণমাধ্যমকর্মী নিহত বা খুন হন। ২০২৪ সালে প্রতি তিন দিনে একজনকে হত্যা করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এএজে